মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার রেলস্টেশনের পার্শ্ববর্তী ডোবা থেকে অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করেছে কুলাউড়া থানা পুলিশ।
গতকাল রবিবার (৩ আগষ্ট) কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকার রেলস্টেশন সংলগ্ন ডোবায় অজ্ঞাতনামা এক কিশোরের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কুলাউড়া থানা পুলিশকে খবর দিলে কিশোরের লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের গদিয়ারচর গ্রামের রাহেল মিয়ার ছেলে রবিউল ইসলাম নাঈম (১৪) গত ২৬/০৭/২০২৫ শুক্রবার থেকে নিখোঁজ রয়েছে।
জানা যায় যে,নাঈম গোয়ালাবাজারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন (ব্রাহ্মণগ্রাম কামিল মাদ্রাসার পাশে) সুপ্রিম ফিলিং স্টেশনের মালিকানাধীন বগুড়া রেস্টুরেন্টে নাইট শিফটে কাজ করতো।
নাঈমের পরিবারের অভিযোগ হোটেল মালিক বুলবুল আহমদ বিকৃত যৌন লিপ্সু একজন মানুষ। এর আগে নারী এবং বলাৎকারের অভিযোগে বুলবুলকে স্থানীয় শালিস বৈঠকে অভিযুক্ত করে শাস্তি দেওয়া হয়। পুলিশ বরাবর কয়েকটি অভিযোগ ও রয়েছে বুলবুলের নামে।
গত ২৫/০৭/২০২৫ বৃহস্পতিবার নাঈম নাইট শিফট ডিউটি করে ভোরে বাসায় এসে তার মাকে শরীরের বিভিন্ন যায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখায়। এবং ইশারায় তার মাকে বুঝয় যে, যৌন লিপ্সু হোটেল মালিক বুলবুল তার সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করেছে।
দিনমজুর নাঈমের মা মানসম্মান এবং অর্থনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে কোনো এ্যাকশনে না গিয়ে নাঈমকে হোটেল বয় এর কাজ ছেড়ে চলে আসতে বলেন। পরদিন শুক্রবার বাদ আছর নাঈম তার পাওনা টাকা এবং হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে আসতে গেলে হোটেল মালিক বুলবুল নানা অজুহাতে তাকে আটকে রেখে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।
নাঈম মুঠোফোনে তার মাকে বলে মা টাকা নিয়ে কিছু পরে আসছি। এভাবে বেজে যায় রাত ১২টা। নাঈমের বড় ভাই অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে হোটেলে গেলে বুলবুল বলেন নাঈম তো অনেক আগেই চলে গেছে। এর পর থেকেই নাঈম একদম নিখোঁজ। নাঈমের বড় ভাই, বাবা,মা নানী মামা হোটেল মালিক বুলবুলের কাছে বার বার নাঈমের খোঁজ নিতে গেলে একেক জনকে একেক কথা বলে বিদায় দেন।
সময় যত যাচ্ছে হোটেল মালিক বুলবুলের কথাবার্তা এবং চালচলনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। বিষয়টিকে আড়াল করতে বুলবুল ইতোমধ্যে ওসমানী নগর থানায় গোপনে একটি জিডি করে রাখেন।
এর মধ্যে ফেসবুকে কুলাউড়ায় অজ্ঞাতনামা কিশোরের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে প্রচার করেন স্থানীয় কয়েকজন। নাঈমের পরিবার ফেসবুকে ছবি দেখেই নিশ্চিত হন যে এটাই তাদের হারানো মানিক নাঈমের ছবি।
পরে গত শনিবার কৌশলে বুলবুলকে ডেকে এনে ওসমানী নগর থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।
আজ সোমবার মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নাঈমের লাশ ময়না তদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। নাঈমের এই আকস্মিক মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বিকৃত যৌন লিপ্সু বুলবুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান নাঈমের পরিবার এবং এলাকাবাসী।