স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিককে হত্যার পর পাগল বেশে পালিয়ে থাকা আসামী আটক, আদালতে খুনের স্বীকারোক্তি
একসাথে কাজ করার সুবাধে রাজমিস্ত্রির সাথে পরকীয়া প্রেম করার কারণে ওই রাজমিস্ত্রিকে হত্যার পর পাগলের ছদ্মবেশে সিলেটের সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায় খুনি। দীর্ঘ দুই বছর গোয়াইনঘাটের জাফলং ও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে থাকারপর অবশেষে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের জালে আটকা পড়ে ওই খুনি। গত শনিবার (৯ আগস্ট) গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী মনরতল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় । গ্রেফতারকৃত গিয়াস উদ্দিন (৫০), হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং ৩ নং দক্ষিণ পূর্ব ইউপি’র বানেশ্বর, বিশ্বাসের পাড়া গ্রামের মৃত: আন্জব আলীর ছেলে। গ্রেফতারের পর সে তার একই এলাকার মৃত নুর আলীর ছেলে রাজমিস্ত্রি সুজাত মিয়া (২৬),
২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানাধীন জাহিদপুর তদন্ত কেন্দ্রের পাশে ভাড়াটিয়া বাসায় পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে ঘুমের মধ্যে কোপাইয়া মুখ মন্ডলে একাধিক গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায় মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
সে তার জবানবন্দিতে আরো উল্লেখ করে, সুজাত মিয়া একজন বিল্ডিংয়ের ঠিকাদার। ছাতক থানা এলাকায় ঘটনাস্থলের সাইটে সুজাতের অধীনে শ্রমিকের কাজ করাকালে আসামী গিয়াস উদ্দীনের স্ত্রী সুফিয়া বেগমের ঘরে গিয়াস উদ্দীনের অনুপস্থিতিতে সুজাত মিয়া প্রবেশ করে এবং ছবি তুলে। দুই দিন পর কাজের সাইটে এসে সে আকারে ইঙিগতে সুজাত মিয়ার স্ত্রীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে মর্মে বুঝাতে চেষ্টা করে এবং তার মোবাইলে আসামী গিয়াস উদ্দীনের স্ত্রীর ছবি দেখায়।উক্ত দৃশ্য দেখে গিয়াস উদ্দীন উত্তেজিত হয়।সুজাতকে ছবি ডিলিট করতে বলে। তাতে সে রাজি হয়না । তখন গিয়াস উদ্দীন কাজ না করেই বাড়িতে চলে যাবে বলে। কিন্তু সুজাত বলে চলে গেলে তার বিরুদ্ধে চার লক্ষ টাকা চুরির মামলা দিবে। আসামী গিয়াস উদ্দীন ভয়ে কোথাও যেতে পারে না। এমনিক সুজাত তাকে ০৮ দিন আটকে রাখে এবং বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। তখন ঘটনার দিন গত ১৩/০১/২০২৩ খ্রিঃ দিবাগত রাত অনুমান ১২.৩০ ঘটিকার সময় সুজাত মিয়াসহ সকল স্টাফ ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় আসামী গিয়াস উদ্দীন সুজাত মিয়ার রুমে সঙ্গোপনে ঢুকে বটি দিয়ে ঘুমন্ত সুজাত মিয়াকে উপর্যুপরি কোপাইয়া পালাইয়া যায়। আর গ্রেফতার এড়াতে পাগলবেশে বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকে।
উক্ত ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নার্গিস বেগম বাদী হয়ে ছাতক থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখমের অভিযোগে গিয়াস উদ্দীনসহ আরও ৪ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানার মামলা নং-০৭, তারিখ-১৮/০১/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩২৪/৩২৬/৩০৭/১০৯/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৯/০১/২০২৩ খ্রিঃ সুজাত মিয়া সিলেট এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত মামলায় ৩০২ পেনাল কোড সংযুক্ত করা হয়। ছাতক থানা পুলিশ তদন্ত শেষে গিয়াস উদ্দীনকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র নং-২৫৩ তাং-২৬/১০/২০২৩ খ্রিঃ ধারা-৩০২ পেনাল কোড দাখিল করেন। অপর আসামীদের কে অব্যাহতি দেন। উক্ত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী নারাজি দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত ২১/১২/২০২৩ খ্রিঃ তারিখের আদেশে পিবিআই সিলেট জেলাকে তদন্তভার অর্পন করেন।
পিবিআই সিলেট জেলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মিন্টু চৌধুরী তার তদন্তকালে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ করে অবহিত হন যে, মামলার প্রধান ও পলাতক আসামী গিয়াস ঘটনার পর হতে পাগলবেশে চুল দাড়ি বড় করিয়া বিভিন্ন মাজারে এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তি এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে এবং সে কোন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না । উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ব্যাপক গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে তদন্তকারী কর্মকর্তা শনিবার (৯ আগস্ট) সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট থানাধীন সীমান্তবর্তী মনরতল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকালে আসামীর পরনে ছিল অজস্র ছেড়া ও সেলাই করা পাঞ্জাবি। তার চুল, দাড়ি গোঁফ সবই বড় এবং এলোমেলো দেখা যায় । তার আচার-আচরন আপাত দৃষ্টিতে পাগলের মত মনে হলেও গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তার সুস্থতা প্রকাশ পায় এবং সে নিজেকে আড়াল রাখতে অসামর্থ হয়। পিবিআই কার্যালয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে পুরো ঘটনা বর্ণনা দেয় এবং বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দি প্রদান করে।