হামলা ও অপহরণের অভিযোগ
আ,লীগ পরিচয়ে ভারতে আশ্রয় প্রার্থী চার বাংলাদেশি আটক
সিলেট :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি হিলস জেলার রংডাঙাই গ্রামে অভিযান চালিয়ে চার বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও রাজ্য পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়ধারীও রয়েছেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও ভিডিও ফুটেজ অনুযায়ী, শনিবার (৯ আগস্ট) সকালবেলায় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে ওই গ্রামে ঘুমন্ত গ্রামবাসীর ওপর হামলা ও অপহরণের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ ওঠে। ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বিষয়টি বিএসএফ ও পুলিশকে জানালে যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আটক চারজন হলেন—জামালপুর সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম, একই জেলার মারফুর রহমান (বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পরিচয়ধারী), নারায়ণগঞ্জের সায়েম হোসেন এবং কুমিল্লার মেহফুজ রহমান। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—স্থানীয় বাসিন্দা বালসাং এ. মারাককে আক্রমণ ও অপহরণের চেষ্টা করেছিলেন। এই হামলায় মারাক মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেঘালয়ের পুলিশ সুপার বানরাপলাং জিরওয়া জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একজন অভিযুক্ত দাবি করেন তিনি তক্ষক শিকার করতে এসেছিলেন। অন্য তিনজন জানিয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় দেশে রাজনৈতিক মামলার মুখোমুখি এবং আশ্রয় নিতে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন। তবে পুলিশ বিষয়টি যাচাই করছে।
অভিযানস্থল থেকে মেঘালয় পুলিশ ও বিএসএফ সদস্যরা একটি বাংলাদেশ পুলিশ আইডি কার্ড, হাতকড়া, পিস্তল হোলস্টার, একটি ম্যাগাজিন কভার, রেডিও সেট, মোবাইল ফোন, মুখোশ, কুঠার, তার কাটার যন্ত্র, বাংলাদেশি মুদ্রা ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত আইডি কার্ড, যা আটক মারফুর রহমানের বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাহাড়ি জঙ্গল থেকে বিএসএফ ও পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় স্থানীয় গ্রামবাসীরা চার বাংলাদেশিকে ধরে আনছে। এ সময় বিপুলসংখ্যক স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছিলেন এবং গ্রেফতারের আগে আটককৃতদের ওপর শারীরিক হামলাও চালান।
শিলং ট্রেন্ডজ ইউটিউব চ্যানেল এবং ইস্টমোজো অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, আটককৃতদের হিন্দিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং তাদের হাতে হাতকড়া পরানো রয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জাকির হোসেন জানান, ভারতীয় গণমাধ্যমে যে বাংলাদেশি পুলিশ কনস্টেবলের কথা বলা হচ্ছে, তিনি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন, তবে পরবর্তীতে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিজিবি সুনামগঞ্জ-২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল একে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, তাহিরপুর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় আট কিলোমিটার ভেতরে ভারতীয় ভূখণ্ডে বিএসএফ, মেঘালয় পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের যৌথ অভিযানে তাদের আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তারা ৬–৭ জন মিলে ভারতে প্রবেশ করেছিল এবং উদ্দেশ্য ছিল ‘অসৎ’। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে।