বাংলাদেশ ফুটবলের শীর্ষ লিগে দলবদলের শেষ হতে বাকি আর মাত্র ৩দিন।
এমন সময়েও অনেক খেলোয়াড় ও কোচ অনিশ্চয়তায়, দলহীন।
নানা প্রতিকূলতায় দেশের শীর্ষ লিগে ক্লাব সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০-এ। বেশিরভাগ ক্লাবই আর্থিক সংকটে জর্জরিত। তবুও তারা বাফুফের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলবদল শেষ করার চেষ্টা করছে।
১০টি ক্লাবে সর্বোচ্চ ৩০০-৩৫০ জন খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পাবেন, যার মধ্যে ৫০-৭০ জন আসবেন বিদেশি ও সাউথ এশিয়ান কোটা থেকে। অর্থাৎ, ১৮ কোটি মানুষের দেশে শীর্ষ লিগে পেশাদার ফুটবল খেলার সুযোগ পাচ্ছেন হাতে গোনা কয়েকশো ফুটবলার-
এবং কর্মসংস্থান হচ্ছে অল্প কিছু কোচের।
বাংলাদেশে শত শত লাইসেন্সধারী কোচ, অসংখ্য ফুটবল একাডেমি আর হাজারো খেলোয়াড় আছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো – শীর্ষ লিগের বাইরে তাদের আয় উপার্জন প্রায় শূন্যের কোটায়। মৌসুম শেষে দল না পেয়ে কত প্রতিভা ফুটবল থেকে হারিয়ে যায়, কত স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়, তার কোনো রেকর্ড নেই।
আজ ফেসবুকে চোখে পড়ল এমনই এক গল্প-
আবিদের গল্প।
সিলেটের ক্যানারি ওয়ার্ফ ইউকে ফুটবল একাডেমি থেকে উঠে আসা আবিদ প্রথম আলো ছড়ান সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব একাডেমিতে। পরে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটান। প্রতিটি ধাপে নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।
২০২৪-২৫ মৌসুমে রাজনৈতিক কারণে শেখ রাসেল, শেখ জামাল ক্লাব হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক নামীদামী খেলোয়াড়ও লাইনচ্যুত হয়ে দিগ্বিদিক ছুটেন।
গত মৌসুমে আবিদ ওয়ান্ডার্স ক্লাবে খেললেও, দলের সামগ্রিক দুর্বলতায় তারা অবনমিত হয়। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য কখনোই দলীয় ব্যর্থতায় ঢাকা পড়ে যাওয়া উচিত নয়।
মাত্র ২২-২৩ বছর বয়সী এই তরুণের সামনে অন্তত ১০-১২ বছরের পেশাদার ক্যারিয়ার পড়ে আছে। লেফট উইং-ব্যাক হিসেবে তার পায়ের গতি, খেলার দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা তাকে জাতীয় দলের সম্ভাবনাময় সম্পদে পরিণত করতে পারে।
কিন্তু দলবদলের শেষ প্রহরেও সে দলহীন। ফুটবলকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া একজন তরুণের জন্য মৌসুমজুড়ে মাঠের বাইরে থাকা মানে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, আর্থিক বিপর্যয়, ভেঙে পড়া মনোবল- এবং হয়তো বাধ্য হয়ে দ্বিতীয় সারির লিগে নেমে যাওয়া, যেখানে জীবিকা নির্বাহ করাটাই কঠিন।
বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলই জাতীয় দলের মূল ভিত। অথচ বারবার দেখা যায়, আবিদদের মতো প্রতিভারা অবহেলা, অব্যবস্থাপনা আর সুযোগের অভাবে হারিয়ে যায়। প্রশ্ন হলো,আমরা কি এই প্রতিভাদের ধরে রাখার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি? নাকি প্রতি মৌসুমে তাদের হারানো এখন আমাদের অভ্যস্ত রুটিন?
যদি আমরা চাই দেশের ফুটবলে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক, তবে আবিদের মতো খেলোয়াড়দের জন্য দরজা খোলা রাখতে হবে, সঠিক পরিকল্পনা আর ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
✍️ এস এম রবিউল ইসলাম নাসির
আবিদরা হারিয়ে গেলে হারাবে বাংলাদেশ ফুটবলের ভবিষ্যৎ। আর আমরা হয়তো আবারও বলব….
একসময় আমাদের একজন ভালো খেলোয়াড় ছিল…!