এম এ কাদির, বালাগঞ্জ :
ধার দেওয়া টাকা ফেরৎ চাওয়ায় দুই প্রতিবেশির মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের জেরে কলেজ ছাত্রী অপহৃত।
বাড়ি ঘরে অগ্নি সংযোগ ও পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ করে। অপহৃত কলেজ ছাত্রী কে উদ্ধারে ও ন্যায় বিচারের পেতে সকলের সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন তার পরিবার। মঙ্গলবার বিকেলে বালাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের শিওরখাল-বড়জমাত গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী অপহৃত কলেজ ছাত্রীরীর মাতা হেপি বেগম। উপরোক্ত আহবান জানিয়ে
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান ধার দেওয়া টাকা ফেরৎ চাওয়ায় প্রতিপক্ষ মেয়েকে অপহরণ বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে পৃথক এ ঘটনায় গত ২৭মে বালাগঞ্জ থানায় হেপি বেগম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসআই শাহ্ ফরিদ আহমদ তদন্ত করেন। হেপি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ তদন্ত করলেও বিএনপি নেতা তোফায়েল আহমদ সুহেলের দলীয় প্রভাবে মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। ৩ জুন আদালতে দায়ের করা হেপির মামলায় বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ শিওরখাল-কদমতলা গ্রামের কয়েস আহমদ হেপির কাছ থেকে ৫০হাজার টাকা ধার নেন। টাকা ফেরৎ চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে হেপির পারিবারকে ঘায়েল করার ষড়যন্ত্র করেন কয়েস। ২৮এপ্রিল কলেজে যাওয়ার পথে হেপির মেয়ে হাবিবাকে (২১) স্থানীয় মোরার বাজার থেকে কয়েসসহ তার সহযোগিরা অপহরণ করেন। এই মামলায় কয়েস সহ ৭জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করছে। কিন্তু দীর্ঘ বিলম্বে তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ায় হতাশ হেপির পরিবার।২৪ জুলাই তার মেয়েকে অপহরণ করে উপজেলার নলজুড় গ্রামে কয়েসের মামার বাড়িতে আটকে রাখার খবর পেয়ে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি। মেয়েকে উদ্ধারের আর্জি জানিয়ে ৮জুলাই আদালতে মামলা করলে ১০জুলাই’র মধ্যে ভিকটিমকে উদ্ধার করতে বালাগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত। হেপির অভিযোগে, মেয়েকে উদ্ধারের কথা বলে এসআই সৌরভ সাহা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আবার বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের সাথে আতাত করে ভিকটিমকে যথাস্থানে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে অভিযুক্তদের মনোনিত লোকজনের স্বাক্ষর নিয়ে তড়িঘড়ি করে ৯জুলাই ‘শূন্য তল্লাশী’ নামে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করায় বিষ্মিত হন হেপির পরিবার। এর আগে ৪জুন আদালতে হেপির দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ২৭মে হেপির বসতঘর ভাঙচুর, টাকা-স্বর্ণালঙ্কার লুট ও বসতঘরে অগ্নি সংযোগ করা হলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। স্থানীয় ভাবে বিচার না পেয়ে আদালতে এই মামলাটি দায়ের করায় আবারও শুরু হয় নির্যাতন। সংবাদ সম্মেলনে হেপি বলেন, ১৯ জুন তার বাড়িতে আরেক দফা ভাঙচুর, লুটপাট, গোয়ালঘর, খড়ের ঘরসহ বসতঘরে পেট্রোল ছিটিয়ে অগ্নি সংযোগ করা হলে ৩টি ষাঁড় পুড়ে মারা যায়। এসব ঘটনায় তার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারটি এখন নিঃস্ব। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিরাপত্তা চেয়ে ফের থানায় মামলা করতে চাইলে প্রভাবশালী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতার সুহেলের আশ্রয়-পশ্রয়ে থাকায় থানা পুলিশ মামলা নিতে অনীহা দেখায়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও প্রাণনাশের হুমকিতে ভীত-স্বন্ত্রস্থ হয়ে তার পরিবার অনেকটা গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ভয়ে তাড়া করায় তাদের সন্তানরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। নিরুপায় হয়ে বারবার মামলা করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি ১৯জুনের ঘটনা উল্লেখ করে ২৯জুন আদালতে হেপির স্বামী আব্দুল হকের দায়ের করা মামলাটি থানায় রুজু করে ৩০জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বালাগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। এই মামলায় বিএনপি নেতা সুহেল, কয়েসসহ ৮জনকে অভিযুক্ত করা হয়। হেপির স্বামী আব্দুল হক অভিযোগ করে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ আর্থিক সুবিধা নিয়ে কালক্ষেপণ করে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ না করায় আমরা ন্যায় বিচার পওয়া নিয়ে শঙ্কিত। সাজানো মামলায় জড়িয়ে আমাদেরকে হয়রানির ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মামলাগুলোর তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া অসৎ পুলিশদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের বিরোদ্ধে আইনানুগ শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা বিএনপি নেতা তোফায়েল আহমদ সুহেল ও কয়েস আহমদ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বালাগঞ্জ থানা ওসি ফরিদ উদ্দিন আহমদ ভুঁইয়া জানান, আদালতের নির্দেশে মেয়েকে উদ্ধারে চেষ্টা করা হয়েছে। অন্য কোনো ঘটনায় তাদের দেওয়া লিখিত কোনো অভিযোগ তিনি পাননি।